শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

বাহুবল ট্রমা সেন্টারের ভাগ্য ‘অন্ধকারে’!

দিদার এলাহী সাজু, বিশেষ প্রতিবেদক : হবিগঞ্জে অদৃশ্য কারণে সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘ট্রমা সেন্টার’র ভাগ্য এখন গহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত ! এতে একদিকে, জরুরী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দূূর্ঘটনায় আহত সাধারণ মানুষ। অপরদিকে, অযত্ন-অবহেলায় বিনষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ।

শুধু তাই নয়, নির্মিত ওই ট্রমা সেন্টারের ভবনটি টানা ৬ বছর ধরে অরক্ষিত থাকায় সেখানে আস্তানা গেড়েছে স্থানীয় বখাটেরা। চলছে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তভুগীসহ এলাকার সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে ‘ফিজিক্যাল ডেভলাপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে সরকার দেশের ৬টি মহাসড়কের পাশে ১০ শয্যার ট্রমা সেন্টার নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। উদ্দেশ্য ছিল মহাসড়কে দূর্ঘটনায় হাত-পা ভাঙ্গা রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় ২০১৪ সালে একটি ৩ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু অদৃশ্য-অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভবনটি হস্তান্তর হয়নি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। ফলে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত রোগীদের পূর্বের মতই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে ঢাকা অথবা সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। ভেঙ্গে গেছে দরজা-জানালার গ্লাস। অযত্ন-অবহেলায় বিনষ্ট হয়েছে স্যানেটারী সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। শুধু তাই নয়, অরক্ষিত থাকায় সেখান আস্তানা গেড়েছে স্থানীয় বখাটেরা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বসছে মদ-গাঁজার আসর, চলছে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে জেলার সচেতন মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে।

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী জহিরুল আলম টিপু জানান, ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে দূর্ঘটনায় আহত রোগীদের তাৎক্ষনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অবহেলায় সেটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি অযত্ন-অবহেলায় বিনষ্ট হচ্ছে কোটি-কোটি টাকার সরকারি সম্পদ।

মিরপুর প্রেসক্লাব সভাপতি সমুজ আলী রানা জানান, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে ট্রমা সেন্টারের ভাগ্য। কিছু দায়িত্বহীন ব্যক্তির উদাসীনতায় ম্লান হয়ে যাচ্ছে সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ। তিনি দ্রুত এর প্রতিকার দাবি করেন।

জানতে চাইলে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ এ.কে.এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভবনটি হস্তান্তরের জন্য আমরা বার বার তাগাদা দিচ্ছি। গণপূর্ত বিভাগ হস্তান্তর করতে চাইলে আমরা এখনই গ্রহন করতে প্রস্তুত। তবে আমরা জানতে পেরেছি ভবনটির কাজ অসম্পূর্ণ। এখনও পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের কাজ বাকি। আমরা নিশ্চয়ই অসম্পূর্ণ ভবন গ্রহন করব না’।

হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রেজাউল বারী তুহিন বলেন, ‘বিষয়টি অনেক পুরনো। আমিও এখানে এসেছি খুব বেশি দিন হয়নি। মূলত বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার কারণেই হস্তান্তর বিলম্বিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভবনটির কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। যে কারণে অনেক মালামাল চুরি হয়ে গেছে। অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। আবার নতুন করে কাজ করতে হবে, মেরামত করতে হবে। সুতরাং আমার মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি ভবনটি হস্তান্তর করা যাবে নাু।’
শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার বিষয়টি-তো অস্বাভাবিক এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোথাও একটা গ্যাপ রয়েছে। না হলে-তো ৬ বছর সময় লাগার কথা নয়’। এ জন্য আপনি আপনার পূর্বসুরীদের দায়ী করবেন কি-না ? এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com